বাউলের কন্ঠে লালনের গান আমরা অনেকেই শুনেছি। সুর-ছন্দ-গায়কীর সহজ আবেদনে ভাবগ্রস্তও হয়েছি। কিন্তু একটা খুঁতখুঁতানি রয়েই গেছে চিরকাল। গানে এমন সব শব্দ রয়েছে, আমাদের প্রচলিত মান-ভাষার মধ্যে পড়ে না বলে যার মানে বুঝিনি কখনো। তার মধ্যে বঙ্গজ শব্দ ছাড়াও আছে ঐস্লামিক ও সনাতন শাস্ত্র-বাক্য ও শব্দ, সরাসরি কোরান বা আগম-নিগমাদি তন্ত্রশাস্ত্র থেকে নেওয়া, এবং জাতে আরবি, ফারসি, তৎসম বা তদ্ভব। লালনসঙ্গীত মূলত সাধন-সঙ্গীত হওয়ায় এই সব শাস্ত্রীয় শব্দের তাৎপর্য শুধুমাত্র অভিধান ঘেঁটে উদ্ধার করা সম্ভব নয়, কেননা সাধন ব্যতীত শাস্ত্র অর্থহীন। সেই জন্যই সাধন-অভিজ্ঞ মানুষ-গুরু’র কাছে শাস্ত্রভেদ প্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারুর পক্ষে গানের অন্তর্গত শাস্ত্রশব্দের টীকা-ভাষ্য করা সম্ভব নয়।
শাঁইজির কৃপায় ঢাকা নিবাসী পরলোকগত সদগুরু সদর উদ্দীন আহমদ চিস্তীর শিষ্য আবদেল মান্নানের সঙ্গে আমাদের আলাপ হয়। তাঁর নিরলস অধ্যবসায়ে শাস্ত্রশব্দের ভাষ্য তৈরির কাজ চলে বিগত তিন বছর ধরে। এ কাজে তাঁকে সহযোগিতা করেছেন কলকাতার বাগবাজার নিবাসী কবি-দার্শনিক প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সঙ্কলনটির একটি পরিচায়নও লিখেছেন যা তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের অমূল্য সম্পদ।
পৃথিবীর যেকোনো দর্শনচিন্তার মূল প্রতিপাদ্য সৃষ্টিতত্ত্ব। এ জগত কোথা থেকে এল বা এই আমি কোথা থেকে এলাম, এ যেন একই প্রশ্নের দুটি মুখ। যা আছে ভান্ডে তাই আছে ব্রহ্মান্ডে এই আধ্যাত্মিক উপলব্ধিতে স্থিত হয়ে এই সঙ্কলনে সন্নিবিষ্ট হয়েছে ৮৭ টি লালন-পদ যা সৃষ্টি-রহস্য বিষয়ক। ২৬৩ টি শব্দার্থ ও টীকা সহ।
সম্পাদনা : আবদেল মান্নান।
Reviews
There are no reviews yet.