20% OFF

সদানন্দনের পথ ও অন্যান্য গল্প | বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়

Sadanander Poth O Anyanyo Golpo

200.00

“যতটা জানি, তার সীমানাটা, দেখেছি, সব সময়ই কুয়াশার মতো অস্পষ্ট হতে হতে কোথাও অজানার সঙ্গে মিশে যায়। এই নিয়েই আমার অস্তিত্ব — জানা, আর তার শেষে কুয়াশা।”

না, কোনো দার্শনিক সন্দর্ভে নয়, কথাগুলো শুনি ‘সবুজ দরজা’ গল্পের প্রোটাগনিস্টের মুখে। (বই: সদানন্দনের পথ ও অন্যান্য গল্প।)

আমাদের জ্ঞান বিজ্ঞান সবকিছুরই ভিত্তি জানা নামক ক্রিয়াটি। কিন্তু যতটুকু জানি ততটুকুই যে কেবল জীবন নয়, এ কথাও কি আমরা হাড়ে হাড়ে, জীবন দিয়েই জানি না? আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা-উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, আমাদের ভয়-ভীতি-আবেগ-উত্তেজনা জ্ঞানের সীমান্তে এক অজানার বলয় থেকে উঠে আসে। আমাদের কল্পনা, বিস্ময়, সৌন্দর্যবোধও তাই।

এই বইয়ের বারোটি গল্প সেই কুয়াশা-কুহেলী-ঘেরা না-জানার প্রেক্ষাপটে আমাদের চেনা জীবনকে রেখে পাঠকের দৃষ্টিগ্রাহ্যতার মধ্যে এনে দেয় অদৃশ্যের অনন্ত ইশারা। বিজ্ঞানের যে জানার পথ সেই পথের পথিক হয়ে, আমরা লেখকের সঙ্গে পায়ে পায়ে এসে পড়ি সেই অজানার দেশে যাকে স্বীকার না করলে অস্বীকার করতে হয় জীবনকেই।

এগুলিকে কল্পবিজ্ঞানের গল্প বলবে কেউ, কেউ বা রহস্য-রোমাঞ্চ অভিযানের গল্প হিসেবে গ্রহণ করতে চাইবে, কেউ এদের মধ্যে খুঁজে পাবে বিজ্ঞানের দর্শন। আমরা বলবো– কোনোটাই মিথ্যা নয়। সব সত্যি। এবং তার পরও আরও কিছু– আরও অনেক অনেক কিছু।

এবং এ এমন এক জিনিস যা বাংলা সাহিত্যে নতুন।

সদানন্দনের পথ ও অন্যান্য গল্প

বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়

——————————————–

পাঠ প্রতিক্রিয়া : প্রবুদ্ধ মিত্র ।।  বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায় আমার প্রিয় কবিদের মধ্যে অন্যতম। যারা তার কবিতার সঙ্গে পরিচিত তারা জানেন তার কাব্যভাষার মাধ্যমে তিনি বাংলার চিরকালীন ঘর গেরস্থালির মরমী ছবি থেকে অনায়াসে পৌঁছে যান ব্রম্ভান্ডের অপার রহস্যে। তার লিখনশৈলীতে মিশে আছে এক অন্তর্লীন যাদু। তিনি যে কবিতার পাশাপাশি একজন উল্লেখযোগ্য গল্পলেখক তা গল্পপাঠকমহলে খুব বেশি আলোচিত নয়। বরেণ্য কথা সাহিত্যিক তারাশঙ্করের দৌহিত্র বিশ্বদেবের গল্প তাই স্বাভাবিকভাবেই কৌতুহলী করে তুলেছিল অনুসন্ধিৎসু পাঠকমহলকে, যারা গল্পের পরম্পরার খোঁজে সম্বৎসর ব্যস্ত থাকেন। গতবছরে ‘ধ্যানবিন্দু’ এই গুরুদায়িত্বটি যত্ন সহকারে পালন করে তার ‘সদানন্দনের পথ ও অন্যান্য গল্প’ প্রকাশ করে। এই গ্রন্থ পাঠের অভিজ্ঞতা যে একেবারেই অন্যরকম তা বোঝাতে আলোচনা শুরুর আগে তার এক অবিস্মরণীয় কবিতা গল্প পাঠকদের সামনে রাখছি।

পিছনে তালের কুঞ্জ। নিচে বাড়িটির খড়ো চালে
সম্বৎসর জমে থাকে মেঘ। পাশাপাশি
শুয়েছে নধর দুটি চালকুমড়ো।

ঐ দেখেই
মজলেন।

পুবে দাওয়া। দাওয়ার ওপরে
কাঞ্চননগরের বঁটি, পিঁড়ি পাতা..
বেলা যায়। দূরে
ব্যাঙের ছাতাটি ঘিরে অন্তহীন দুপুর নেমেছে।

সুখে আছেন। বিউলির ডাল সহযোগে
প্রত্যহ আহার, নিদ্রা..
নাম-

বিশ্ব
ব্রহ্মাণ্ড ডাকঘর
জেলা বীরভূম।

বহু আলোচিত এই কবিতাটির শেষে কবি নিজের যে ঠিকানা দিচ্ছেন আমি সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। গ্রাম বাংলার চেনা এক গৃহবর্ণনা দিয়ে কথক বলছেন তার নাম বিশ্ব। ডাকঘর ব্রম্ভান্ড। বীরভূম জেলা। এই অপূর্ব ঠিকানার কবি, যিনি নিজের মাটির দাওয়া থেকে সটান ব্রম্ভান্ডে বিরাজ করেন, তার গল্প সংকলন পাঠ যে এক অনাস্বাদিত আনন্দের, তা এর পাঠে না গেলে বোঝা যেত না।
এই সংকলনে যে বারোটি গল্প আছে তার প্রত্যেকটি পাঠ করে আমাকে থামতে হয়েছে। ভাবতে হয়েছে অনেকটা সময় জুড়ে। তারপর পরের গল্পে যাওয়া। গল্পগুলির বিষয়ই ভাবনার অতলে নিয়ে যাবে। এতে লেখক সৃষ্টি রহস্যের পর্দা ভেদের এক বিস্ময়কর খেলায় মেতেছেন। বারোটি গল্পে বারো রকমের রহস্য। না, এ কোনো ক্রাইম থ্রিলার নয়। এ হলো সৃষ্টির রহস্য। যার মধ্যে অবধারিত ভাবে অন্তর্লীন হয়ে আছে বিজ্ঞান, দর্শন ও সৌন্দর্য। গল্পগুলি শুরু হচ্ছে খুব আটপৌরে ভঙ্গিতে। তারপর তার চলনের মধ্যবর্তীতে পাঠকের সামনে আসছে এক একটা যাদু’র ছোঁয়া। অথচ, এ আমাদের প্রচলিত ধারণার ম্যাজিক রিয়্যালিজম নয়। আর এক যাদুবাস্তবতা। যার প্রতি পরতে লেগে আছে মনস্তাত্ত্বিক বিজ্ঞান। না, অবশ্যই তা চেনা সায়েন্স ফিকশনও নয়। তাহলে কি ? পাঠককে কৌতুহলের শিখরে তুলে আমি দায়িত্ব নিয়ে এর পাঠে যেতে বলবো। এত মনোজ্ঞ পাঠাভিজ্ঞতা সচরাচর আসেনা। লেখক যেহেতু প্রায় সব গল্পেই ট্র্যাভেলগকে ব্যবহার করেছেন, তাই তার ঝরঝরে ন্যারেশান সুখপাঠ্য করেছে গল্পগুলোকে। এই সনাতন লিখনশৈলি গল্পের বিষয় বৈচিত্রকে পাঠকের মননের গভীরে পৌঁছে দেয়।
লেখক নিজে একাধারে পদার্থবিদ্যায় পারদর্শী। দর্শনে প্রগাঢ় ধ্যানমগ্ন। অন্যদিকে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের অচেনা রহস্য বিষয়ে অনুসন্ধিৎসু মনের অধিকারী। তাই তার গল্পগুলোতে অবাধে এসেছে বিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্র যা ব্রম্ভান্ডের ব্যপকতাকে, তার অনন্ত সৌন্দর্যকে ব্যাখ্যা করতে তৎপর। গল্পগুলো পাঠের সুখ এখানেই। এহেন গল্পসৃজনে যে লেখক এক অন্তর্লীন দর্শনকে অবলম্বন করছেন, তা দীক্ষিত পাঠকের বুঝতে অসুবিধে হয়না। তা এখানে আপাতত অনুল্লেখিত থাক। শুধু এইটুকু জানিয়ে দেওয়া যে, সংকলনের প্রথম গল্প ‘ফিবোনেচ্চি সিরিজ’ গণিতের একটি সুত্র ধরে এগিয়েছে। যেখানে এক অদৃশ্য শিশু’র প্রসঙ্গ এনেছেন লেখক। সমুদ্রতট থেকে উত্থিত পাথরের টিলা যে শেষ পর্যন্ত বিশাল পর্বতশ্রেণীতে মিশে যাচ্ছে সেই সৃষ্টির অন্তরালে যার হাত। আর শেষ গল্প ‘ বক্সা পাহাড়ের রহস্য কুয়াশা’ তে ব্যবহৃত হয়েছে ‘মোবিয়াস্ সারফেস্’ নামে গণিতবিদ্যার আর একটি সুত্র। গল্পের শেষে প্রকৃতির এক অদ্ভুত রহস্য উন্মোচনের পর এই সূত্রের ব্যাখ্যায় কথক বলছেন, ‘ আঙুলের মোচড়ে…জুড়ে যায়।’ সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন ওঠে, ‘কার আঙুল ?’
এটাই হলো মোক্ষম প্রশ্ন ও দৃষ্টিভঙ্গি এই লেখকের। মাঝের দশটি গল্পতেও পাঠককে স্থিতাবস্থা থেকে অনন্তে নিয়ে যেতে যেতে তার এধরনের প্রশ্নের সহযোগী করে তুলতে বাধ্য করেছেন। তার এই গল্প সংকলন পাঠ এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এই লেখক নিজেই বলেন, তার নাম ‘বিশ্ব’। ঠিকানা বলেন, ‘ব্রম্ভান্ড ডাকঘর’। নিজের অজান্তেই লেখকের খোঁজে পাঠক তার ঠিকানায় পৌঁছে যান।

Reviews

There are no reviews yet.

Recently Viewed Products
You have no recently viewed item.